সমাসের শ্রেণীবিভাগ ----কর্মধারয় সমাস---উপপর্ব ( গ)
সমাসের শ্রেণীবিভাগ -কর্মধারয় সমাস -উপপর্ব (গ)
উপমান কর্মধারয় সমাস :- যে কর্মধারয় সমাসে উপমান পদের সঙ্গে সাধারণ ধর্মবাচক পদের সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে ।
এই সমাসের ব্যাসবাক্যে উপমান পদটি প্রথমে, তারপর সাদৃশ্যবাচক শব্দ ও শেষে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকে ।
যথা :- তুষারের ন্যায় ধবল = "তুষারধবল ।"
এখানে "তুষারধবল "?--কোন উত্তর পাওয়া যাবে না।
" তুষার " পদটি উপমান ।
" ন্যায় "পদটি সাদৃশ্যবাচক।
" ধবল " পদটি সাধারণ ধর্মবাচক ।
অনুরূপ ভাবে ---তুষারের ন্যায় শীতল = তুষারশীতল ;
মিশির ন্যায় কালো = মিশ্ কালো ;
সিঁদুরের ন্যায় রাঙা = সিঁদুররাঙা ;
ঘনের ( মেঘের ) ন্যায় শ্যাম = ঘনশ্যাম ;
শশকের মতো ব্যস্ত = শশব্যস্ত ;
ফুটির ন্যায় ফাটা = ফুটিফাটা ;
কমলের ন্যায় কোমল = কমলকোমল ;
ধুলার মতো গুঁড়ো = ধুলা গুঁড়ো ;---ইত্যাদি ।
উপমিত কর্মধারয় সমাস :- সাধারণধর্মের উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সঙ্গে উপমানের যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে ।
ব্যাসবাক্যে সাধারণত উপমেয় পদটি প্রথমে, তারপর উপমান পদ এবং সবশেষে সাদৃশ্যবাচক শব্দ বসে ।
যথা :- পুরুষ সিংহের ন্যায় = " পুরুষসিংহ "
এখানে " পুরুষসিংহ " ?----সাধারন ধর্ম নেই ।
" পুরুষ "----উপমেয় পদ ।
" সিংহ "----উপমান পদ ।
" ন্যায় "-----সাদৃশ্যবাচক পদ ।
অনুরূপ ভাবে---অধর পল্লবের ন্যায় = অধরপল্লব ;
নর দেবের তুল্য = নরদেব ;
মুখ চন্দ্রের ন্যায় = মুখচন্দ্র ;
নয়ন কমলের ন্যায় = নয়নকমল ;
চরণ পদ্মের ন্যায় = চরণপদ্ম ;
কথা অমৃতের তুল্য = কথামৃত; -----ইত্যাদি ।
রূপক কর্মধারয় সমাস :- উপমেয় ও উপমানের
মধ্যে অভেদ কল্পনা করে পূর্বপদ উপমেয়ের সহিত
পরপদ উপমানের যে সমাস হয় তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে ।
এই সমাসের ব্যাসবাক্যে উপমেয় ও উপমানের মধ্যে " রূপ "পদটি বসে উভয়ের মধ্যে অভেদ কল্পনা কে আরো নিগূঢ় করে তোলে । সমস্ত-পদটি বিশেষ্য পদে
পরিণত হয় ।
যথা :- মন রূপ মাঝি = " মনমাঝি "
এখানে ---" মন "---উপমেয় পদ ।
" মাঝি "----উপমান পদ ।
" রূপ "----উভয়ের মধ্যে অভেদ কল্পনা কে আরো নিগূঢ় করেছে ।
অনুরূপ ভাবে :- আঁখি রূপ পাখি = আঁখিপাতা;
যৌবন রূপ কুসুম = যৌবনকুসুম ;
প্রাণ রূপ প্রবাহিন = প্রাণপ্রবাহিণী ;
জীবন রূপ উদ্যান = জীবন-উদ্যান ;
হৃদয় রূপ কুসুম = হৃদয়কুসুম ;
কথা রূপ অমৃত = কথামৃত ;
নদী রূপ জপমালা = নদীজপমালা ;----ইত্যাদি ।
উপমিত কর্মধারয় ও রূপক কর্মধারয় সমাসের পার্থক্য ।
( মিল )
১)উভয় সমাসের ক্ষেত্রে সমাস -বদ্ধ পদটি বিশেষ্য।
২)উভয়ই ক্ষেত্রে উপমান -উপমেয়ের তুলনা বুঝায়।
৩)কোনোটিতেই সাধারণধর্মবাচক পদের উল্লেখ থাকে না ।
( অমিল )
( ক )রূপক কর্মধারয়ে উপমান-উপমেয়ের তুলনা যেরূপ নিবিড়, উপমিত কর্মধারয়ে সে রূপ নিবিড় নয়।
( খ ) উপমিত কর্মধারয়ে সমাস-বদ্ধ পদের পূর্বাঅংশটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপমেয়, মাঝে মাঝে উপমান হয় । কিন্তু রূপকে উপমেয়টি সর্বদাই পূর্বে
থাকে এবং উত্তরাংশে থাকে উপমান ।
( গ ) উপমিত কর্মধারয়ে উপমেয়ের প্রাধান্য, কিন্তু রূপকে উপমানের প্রাধান্য ।
নিম্নে বিষয়টি বিশদে আলোচনা করা হল ।
প্রথম বাক্য - তন্ময়ের মুখচন্দ্র উজ্জ্বল হল জননী হৃদয় ।
দ্বিতীয় বাক্য - তন্ময়ের মুখচন্দ্র চুম্বন করিল জননী ।
প্রথম বাক্যে ''মুখচন্দ্র '' কাহার প্রাধান্য ' মুখের ' না ' চন্দ্রের ' ক্রিয়াটিকে প্রশ্ন করলে বোঝা যাবে ।
কে উজ্জ্বল করল ? মুখ না চন্দ্র ? মুখের পক্ষে উজ্জ্বল করা সম্ভব নয়, চন্দ্রের পক্ষে সম্ভব ।আর "চন্দ্র "এখানে উপমানের প্রাধান্য ।সমাস হবে রূপক কর্মধারয় । ব্যাসবাক্য হবে " মুখ রূপ চন্দ্র "=মুখচন্দ্র ।
দ্বিতীয় বাক্যে " মুখচন্দ্র " ক্রিয়াটিকে প্রশ্ন করলে বোঝা যাবে ' মুখের ' না ' চন্দ্রের ' কার প্রাধান্য বেশি ।
জননী '' চন্দ্রের'' চুম্বন করতে পারে না ।কিন্তু " মুখের "
চুম্বন করতে পারে ।অতয়েব এই বাক্যে উপমেয় মুখের প্রাধান্য রয়েছে ।ব্যাসবাক্য হবে মুখ চন্দ্রের ন্যায় = মুখচন্দ্র; উপমিত কর্মধারয় সমাস।
উপমান, উপমিত ও রূপক কর্মধারয় সমাস ভালো করে বুঝতে হলে নিম্নে বিষয়গুলি জানতে হবে।
উপমেয় বাচক পদ বা উপমিত পদ :-যাকে তুলনা করা হয়, তাকে বলা হয় উপমেয় বাচক পদ বা উপমিত পদ ।যেমন :- " চাঁদমুখ"---এখানে 'মুখ' কে তুলনা করা হচ্ছে চাঁদের সঙ্গে, অতএব ' মুখ 'এখানে
উপমেয় বাচক পদ ।
উপমান বাচক পদ :-যার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাকে উপমান বাচক পদ বলে । যেমন :- " চাঁদমুখ "--এখানে মুখকে চাঁদের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে ।অতয়েব " চাঁদ " উপমান বাচক পদ ।
তুলনা বাচক পদ :- একের সঙ্গে অপরের তুলনা করতে গিয়ে যেসব শব্দ ব্যবহার করা হয়,তাকে বলে
তুলনা বাচক শব্দ ।যেমন তুল্য, মতো সদৃশ , ন্যায় ইত্যাদি ।
সাধারণ ধর্মবাচক পদ :- প্রত্যেক বিষয়ের বা বস্তুর এক একটি প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম বা গুণ থাকে,
তাকেই সাধারণ ধর্মবাচক পদ বলে ।যেমন :-
তুষারধবল = " তুষারের " সাধারণ ধর্ম হল ' ধবলতা '।
মেঘকালো = " মেঘের " সাধারণ ধর্ম হল 'কালোরঙ '।
No comments
THANKS.