বর্ষামঙ্গল ------------ রবীন্দ্রনাথঠাকুর
বর্ষামঙ্গল
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে
জলসিঞ্চিত ক্ষিতিসৌরভ-রভসে
ঘনগৌরবে নবযৌবনা বরষা
শ্যামগম্ভীর সরসা ।
গুরুগর্জনে নীল অরণ্য শিহরে
উতলা কলাপি কেকা-কলরবে বিহরে ;
নিখিল-চিত্ত-হরষা
ঘনগৌরবে আসিছে মত্ত বরষা ।
কোথা তোরা অয়ি তরুণী পথিক-ললনা ,
জনপদবধূ তড়িৎ-চকিত-নয়না ,
মালতীমালিনী কোথা প্রিয়পরিচারিকা ,
কোথা তোরা অভিসারিকা ।
ঘনবনতলে এসো ঘননীলবসনা ,
ললিত নৃত্যে বাজুক স্বর্ণরসনা,
আনো বীণা মনোহারিকা ।
কোথা বিরহিণী, কোথা তোরা অভিসারিকা ।
আনো মৃদঙ্গ, মুরজ, মুরলী মধুরা ,
বাজাও শঙ্খ, হুলুরব করো বধূরা ,
এসেছে বরষা, ওগো নব অনুরাগিণী ,
ওগো প্রিয়সুখভাগিনী ।
কুঞ্জকুটীরে, অয়ি ভাবাকুললোচনা,
ভূর্জপাতায় নব গীত করো রচনা
মেঘমল্লার রাগিণী ।
এসেছে বরষা, ওগো নব অনুরাগিনী ।
কেতকীকেশরে কেশপাশ করো সুরভি ,
ক্ষীণ কটিতটে গাঁথি লয়ে পরো করবী ,
কদম্বরেণু বিছাইয়া দাও শয়নে ,
অঞ্জন আঁকো নয়নে ।
তালে তালে দুটি কঙ্কণ কনকনিয়া
ভবন-শিখীরে নাচাও গণিয়া গণিয়া
স্মিতবিকশিত বয়নে ,
কদম্বরেণু বিছাইয়া ফুলশয়নে ।
স্নিগ্ধসজল মেঘকজ্জল দিবসে
বিবশ প্রহর অচল অলস আবেশে ,
শশীতারাহীনা অন্ধতামসী যামিনী ;
কোথা তোরা পুরকামিনী ।
আজিকে দুয়ার রুদ্ধ ভবনে ভবনে
জনহীন পথ কাঁদিছে ক্ষুব্ধ পবনে,
চমকে দীপ্ত দামিনী ;
শূন্যশয়নে কোথা জাগে পুরকামিনী ।
যূথী-পরিমল আসিছে সজল সমীরে ,
ডাকিছে দাদুরী তমালকুঞ্জ-তিমিরে ,
জাগো সহচরী আজিকার নিশি ভুলো না ,
নীপশাখে বাঁধো ঝুলনা ।
কুসুম-পরাগ ঝরিবে ঝলকে ঝলকে ,
অধরে অধরে মলন অলকে অলকে,
কোথা পুলকের তুলনা।
নীপশাখে সখী ফুলডোরে বাঁধো ঝুলনা ।
এসেছে বরষা , এসেছে নবীনা বরষা ,
গগন ভরিয়া এসেছে ভুবন-ভরসা ,
দুলিছে পবনে সনসন বনবীথিকা ।
গীতময় তরুলতিকা ।
শতেক যুগের কবিদলে মিলি আকাশে
ধ্বনিয়া তুলিছে মত্তমদির বাতাসে
শতেক যুগের গীতিকা ।
শত শত গীত-মুখরিত বনবীথিকা ।
(---------- "কল্পনা ")
জোড়াসাঁকো
১৭ বৈশাখ ১৩০৪
No comments
THANKS.