শরৎ ---------রবীন্দ্রনাথঠাকুর
শরৎ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আজি কি তোমার মধুর মুরতি
হেরিনু শারদ প্রভাতে ।
হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ
ঝলিছে অমল শোভাতে ।
পারে না বহিতে নদী জলধার,
মাঠে মাঠে ধান ধরে নাকো আর,
ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল
তোমার কানন-সভাতে ।
মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী
শরৎকালের প্রভাতে ।
জননী তোমার শুভ আহ্বান
গিয়েছে নিখিল ভুবনে---
নূতন ধান্যে হবে নবান্ন
তোমার ভবনে ভবনে ।
অবসর আর নাহিকো তোমার---
আঁটি আঁটি ধান চলে ভারে ভার,
গ্রামপথে-পথে গন্ধ তাহার
ভরিয়া উঠিছে পবনে ।
জননী তোমার আহ্বানলিপি
পাঠায়ে দিয়েছ ভুবনে ।
তুলি মেঘভার আকাশ তোমার
করেছ সুনীলবরনী;
শিশির ছিটায়ে করেছ শীতল
তোমার শ্যামল ধরণী ।
স্থলে জলে আর গগনে গগনে
বাঁশি বাজে যেন মধুর লগনে,
আসে দলে দলে তব দ্বারতলে
দিশি দিশি হতে তরণী ।
আকাশ করেছ সুনীল অমল
স্নিগ্ধশীতল ধরণী ।
বহিছে প্রথম শিশিরসমীর
ক্লান্ত শরীর জুড়ায়ে---
কুটীরে কুটীরে নব নব আশা
নবীন জীবন উড়ায়ে ।
দিকে দিকে মাতা কত আয়োজন,
হাসিভরা মুখ তব পরিজন
ভান্ডারে তব সুখ নব নব
মুঠা মুঠা লয় কুড়ায়ে ।
ছুটেছে সমীর আঁচলে তাহার
নবীন জীবন উড়ায়ে ।
আয় আয় আয় , আছ যে যেথায়
আয় তোরা সবে ছুটিয়া,
ভান্ডারদ্বার খুলেছে জননী ,
অন্ন যেতেছে লুটিয়া ।
ও পার হইতে আয় খেয়া দিয়ে,
ও পাড়া হইতে আয় মায়ে ঝিয়ে,
কে কাঁদে ক্ষুধায় জননী শুধায়
আয় তোরা সবে জুটিয়া ।
ভান্ডারদ্বার খুলেছে জননী
অন্ন যেতেছে লুটিয়া ।
মাতার কণ্ঠে শেফালিমাল্য
গন্ধে ভরিছে অবনী ।
জলহারা মেঘ আঁচলে খচিত
শুভ্র যেন সে নবনী ।
পরেছ কিরীট কনক কিরণে ,
মধুর মহিমা হরিতে হিরণে ,
কুসুম-ভূষণ জড়িত-চরণে
দাঁড়ায়েছে মোর জননী ।
আলোকে শিশিরে কুসুমে ধান্যে
হাসিছে নিখিল অবনি ।
(--------" কল্পনা ")
No comments
THANKS.