নববর্ষা ------------ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নববর্ষা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে
ময়ূরের মতো নাচে রে
হৃদয় নাচে রে ।
শত বরনের ভাব-উচ্ছ্বাস
কলাপের মতো করেছে বিকাশ ।
আকুল পরান আকাশে চাহিয়া
উল্লাসে কারে যাচে রে ।
হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে
ময়ূরের মতো নাচে রে ।
গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি
গরজে গগনে গগনে
গরজে গগনে ।
ধেয়ে চলে আসে বাদলের ধারা,
নবীন ধান্য দুলে দুলে সারা,
কুলায়ে কাঁপিছে কাতর কপোত,
দাদুরী ডাকিছে সঘনে ।
গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি
গরজে গগনে গগনে ।
নয়নে আমার সজল মেঘের
নীল অঞ্জন লেগেছে
নয়নে লেগেছে ।
নবতৃণদলে ঘনবনছায়ে
হরষ আমার দিয়েছি বিছায়ে ,
পুলকিত নীপ-নিকূঞ্জে আজি
বিকশিত প্রাণ জেগেছে ।
নয়নে সজল স্নিগ্ধ মেঘের
নীল অঞ্জন লেগেছে ।
ওগো প্রাসাদের শিখরে আজিকে
কে দিয়েছে কেশ এলায়ে
কবরী এলায়ে ?
ওগো নবঘন-নীলবাসখানি
বুকের উপরে কে লয়েছে টানি ?
তড়িৎ-শিখার চকিত আলোকে
ওগো কে ফিরিছে খেলায়ে ?
ওগো প্রাসাদের শিখরে আজিকে
কে দিয়েছে কেশ এলায়ে?
ওগো নদীকূলে তীর-তৃণতলে
কে ব'সে অমল বসনে
শ্যামল বসনে?
সুদূর গগনে কাহারে সে চায়?
ঘাট ছেড়ে ঘট কোথা ভেসে যায় ?
নবমালতীর কচি দলগুলি
আনমনে কাটে দিনে ।
ওগো নদীকূলে তীর-তৃণতলে
কে ব'সে শ্যামল বসনে ?
ওগো নির্জনে বকুলশাখায়
দোলায় কে আজি দুলিছে
দোদুল দুলিছে ?
ঝরকে ঝরকে ঝরিছে বকুল
আঁচল আকাশে হতেছে আকুল ,
উড়িয়া অলক ঢাকিছে পলক
কবরী খসিয়া খুলিছে ।
ওগো নির্জনে বকুলশাখায়
দোলায় কে আজি দুলিছে ?
বিকচ-কেতকী তটভূমি-'পরে
কে বেঁধেছে তার তরণী
তরুণ তরণী?
রাশি রাশি তুলি শৈবালদল
ভরিয়া লয়েছে লোল অঞ্চল,
বাদল-রাগিনী সজল নয়নে
গাহিছে পরান-হরণী ।
বিকচ-কেতকী তটভূমি-'পরে
বেঁধেছে তরুণ তরণী ।
হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে
ময়ূরের মতো নাচে রে
হৃদয় নাচে রে ।
ঝরে ঘনধারা নবপল্লবে,
কাঁপিছে কানন ঝিল্লির রবে,
তীর ছাপি নদী কল-কল্লোলে
এল পল্লীর কাছে রে ।
হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে
ময়ূরের মতো নাচে রে ।
(-----"ক্ষণিকা ")
শিলাইদহ
২০ জৈষ্ঠ ১৩০৭
No comments
THANKS.