মদনভষ্মের পূর্বে --------'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর '
মদনভষ্মের পূর্বে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
একদা তুমি অঙ্গ ধরি ফিরিতে নব ভুবনে
মরি মরি অনঙ্গ দেবতা ।
কুসুমরথে মকরকেতু উড়িত মধু-পবনে
পথিকবধূ চরণে প্রণতা ।
ছড়াত পথে আঁচল হতে অশোক চাঁপা করবী
মিলিয়া যত তরুণ তরুণী,
বকুলবনে পবন হত সুরার মতো সুরভি
পরান হত অরুণবরনী ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
একদা তুমি অঙ্গ ধরি ফিরিতে নব ভুবনে
মরি মরি অনঙ্গ দেবতা ।
কুসুমরথে মকরকেতু উড়িত মধু-পবনে
পথিকবধূ চরণে প্রণতা ।
ছড়াত পথে আঁচল হতে অশোক চাঁপা করবী
মিলিয়া যত তরুণ তরুণী,
বকুলবনে পবন হত সুরার মতো সুরভি
পরান হত অরুণবরনী ।
সন্ধ্যা হলে কুমারীদলে বিজন তব দেউল
জ্বালায়ে দিত প্রদীপ যতনে ,
শূন্য হলে তোমার তূণ বাছিয়া ফুল-মুকুলে
সায়ক তারা গড়িত গোপনে ।
কিশোর কবি মুগ্ধ ছবি বসিয়া তব সোপানে
বাজায়ে বীণা রচিত রাগিণী ।
হরিণ-সাথে হরিণী আসি চাহিত দীন নয়ানে,
বাঘের সাথে আসিত বাঘিনী ।
হাসিয়া যবে তুলিতে ধনু প্রণয়ভীরু ষোড়শী
চরণে ধরি করিত মিনতি ।
পঞ্চশর গোপনে লয়ে কৌতূহলে উলসি
পরখছলে খেলিত যুবতী ।
শ্যামল তৃণশয়নতলে ছড়ায়ে মধু-মাধুরী
ঘুমাতে তুমি গভীর আলসে,
ভাঙাতে ঘুম লাজুক বধূ করিত কত চাতুরী
নূপুর দুটি বাজাত লালসে ।
কাননপথে কলস লয়ে চলিত যবে নাগরী
কুসুমশর মারিতে গোপনে,
যমুনাকূলে মনের ভুলে ভাসায়ে দিয়ে গাগরি
রহিত চাহি আকুল নয়নে ।
বাহিয়া তব কুসুমতরী সমুখে আসি হাসিতে
শরমে বালা উঠিত জাগিয়া,
শাসনতরে বাঁকায়ে ভুরু নামিয়া জলরাশিতে
মারিত জল হাসিয়া রাগিয়া ।
তেমনি আজো উদিছে বিধু মাতিছে মধুযামিনী
মাধবীলতা মুদিছে মুকুলে।
বকুলতলে বাঁধিছে ফুল একেলা বসি কামিনী
মলয়ানিল-শিথিল দুকূলে ।
বিজন নদীপুলিনেম আজো ডাকিছে চখা চখিরে,
মাঝেতে বহে বিরহ-বাহিনী ।
গোপন-ব্যথা-কাতরা বালা বিরলে ডাকি সখীরে
কাঁদিয়া কহে করুন কহিনী ।
এসো গো আজি অঙ্গ ধরি সঙ্গে করি সখারে
বন্যমালা জড়ায়ে অলকে,
এসো গোপনে মৃদুচরণে বাসরগৃহ-দুয়ারে
স্তিমিতশিখা প্রদীপ-আলোকে ।
এসো চতুর মধুর হাসি তড়িৎ-সম সহসা
চকিত করো বধূরে হরষে ,
নবীন করো মানব-ঘর, ধরণী করো বিবশা
দেবতাপদ-সরস-পরশে ।
(--------"কল্পনা")
১১ জৈষ্ঠ ১৩০৪
No comments
THANKS.