সোনার তরী -------- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সোনার তরী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
( -----------"সোনার তরী ")
শিলাইদহ |বোট
ফাল্গুন ১২৯৮
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা ।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা ।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা ।
একখানি ছোট ক্ষেত,আমি একেলা,
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা ।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসীমাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা ।
এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা ।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে ।
ভরা-পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দুধারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে ।
ওগো তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে,
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে ।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে
যত চাও তত লও তরণী-'পরে ।
আর আছে? ---আর নাই, দিয়েছি ভরে।
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে--
এখন আমারে লহো করুণা করে ।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই -- ছোটো সে তরী
আমারই সোনার ধানে গিয়েছে ভরি ।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি---
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী ।
শিলাইদহ |বোট
ফাল্গুন ১২৯৮
No comments
THANKS.