বিবিধ প্রবন্ধ - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন (পর্ব -২)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সাত : - বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা করিবেন না । বিদ্যা থাকিলে, তাহা আপনিই প্রকাশ পায় , চেষ্টা করিতে হয়না । বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা পাঠকের অতিশয় বিরক্তিকর, এবং রচনার পারিপাট্যের বিশেষ হানিজনক । এখনকার প্রবন্ধে ইংরাজি, সংস্কৃত, ফরাসি, জার্ম্মান ,কোটেশন বড় বেশী দেখতে পাই ।
যে ভাষা আপনি জানেন না, পরের গ্রন্থের সাহায্যে সে
ভাষা হইতে কদাচ উদ্ধৃত করিবেন না ।
আট : - অলংকার -প্রয়োগ বা রসিকতার জন্য চেষ্টিত
হইবেন না । স্থানে স্থানে অলংকার ব্যঙ্গের প্রয়োজন হয়
বটে; লেখকের ভাণ্ডারে এ সামগ্রী থাকিলে, প্রয়োজন মতে আপনিই আসিয়া পৌঁছিবে - ভাণ্ডারে না থাকিলে মাথা কুটিলেও আসিবে না । অসময়ে বা শূন্য ভাণ্ডারে
অলংকার -প্রয়োগের বা রসিকতার চেষ্টার মত কদর্য্য
আর কিছুই নাই ।
নয় : - যে স্থানে অলংকার বা ব্যঙ্গ বড় সুন্দর বলিয়া বোধ হইবে, সেই স্থানটি কাটিয়া দিবে, এটি প্রাচীন বিধি। আমি সে কথা বলি না । কিন্তু আমার পরামর্শ এই যে, সে স্থানটি বন্ধুবর্গকে পুনঃ পুনঃ পড়িয়া শুনাইবে ।
যদি ভাল না হইয়া থাকে, তবে দুই চারি বার পড়িলে লেখকের নিজেরই আর উহা ভালো লাগিবে না - বন্ধুবর্গের নিকট পড়িতে লজ্জা করিবে ।তখন উহা কাটিয়া দিবে ।
দশ : - সকল অলঙ্কারের শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার সরলতা ।যিনি সোজা কথায় আপনার মনের ভাব সহজে পাঠককে বুঝাইতে পারেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ লেখক ।
কেন না, লেখার উদ্দেশ্য পাঠককে বুঝান ।
এগার : - কাহারও অনুকরণ করিও না ।অনুকরণে দোষগুলি অনুকৃত হয়, গুণগুলি হ্য় না ।অমুক ইংরাজি বা সংস্কৃত বা বাঙ্গালা লেখক এইরূপ লিখিয়াছেন, আমিও এরূপ লিখিব, এ কথা কদাপি মনে স্থান দিও না ।
বারো : - যে কথার প্রমাণ দিতে পারিবে না, তাহা লিখিও না ।প্রমাণগুলি প্রযুক্ত করা সকল সময়ে প্রয়োজন হয় না, কিন্তু হাতে থাকা চাই ।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সাত : - বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা করিবেন না । বিদ্যা থাকিলে, তাহা আপনিই প্রকাশ পায় , চেষ্টা করিতে হয়না । বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা পাঠকের অতিশয় বিরক্তিকর, এবং রচনার পারিপাট্যের বিশেষ হানিজনক । এখনকার প্রবন্ধে ইংরাজি, সংস্কৃত, ফরাসি, জার্ম্মান ,কোটেশন বড় বেশী দেখতে পাই ।
যে ভাষা আপনি জানেন না, পরের গ্রন্থের সাহায্যে সে
ভাষা হইতে কদাচ উদ্ধৃত করিবেন না ।
আট : - অলংকার -প্রয়োগ বা রসিকতার জন্য চেষ্টিত
হইবেন না । স্থানে স্থানে অলংকার ব্যঙ্গের প্রয়োজন হয়
বটে; লেখকের ভাণ্ডারে এ সামগ্রী থাকিলে, প্রয়োজন মতে আপনিই আসিয়া পৌঁছিবে - ভাণ্ডারে না থাকিলে মাথা কুটিলেও আসিবে না । অসময়ে বা শূন্য ভাণ্ডারে
অলংকার -প্রয়োগের বা রসিকতার চেষ্টার মত কদর্য্য
আর কিছুই নাই ।
নয় : - যে স্থানে অলংকার বা ব্যঙ্গ বড় সুন্দর বলিয়া বোধ হইবে, সেই স্থানটি কাটিয়া দিবে, এটি প্রাচীন বিধি। আমি সে কথা বলি না । কিন্তু আমার পরামর্শ এই যে, সে স্থানটি বন্ধুবর্গকে পুনঃ পুনঃ পড়িয়া শুনাইবে ।
যদি ভাল না হইয়া থাকে, তবে দুই চারি বার পড়িলে লেখকের নিজেরই আর উহা ভালো লাগিবে না - বন্ধুবর্গের নিকট পড়িতে লজ্জা করিবে ।তখন উহা কাটিয়া দিবে ।
দশ : - সকল অলঙ্কারের শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার সরলতা ।যিনি সোজা কথায় আপনার মনের ভাব সহজে পাঠককে বুঝাইতে পারেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ লেখক ।
কেন না, লেখার উদ্দেশ্য পাঠককে বুঝান ।
এগার : - কাহারও অনুকরণ করিও না ।অনুকরণে দোষগুলি অনুকৃত হয়, গুণগুলি হ্য় না ।অমুক ইংরাজি বা সংস্কৃত বা বাঙ্গালা লেখক এইরূপ লিখিয়াছেন, আমিও এরূপ লিখিব, এ কথা কদাপি মনে স্থান দিও না ।
বারো : - যে কথার প্রমাণ দিতে পারিবে না, তাহা লিখিও না ।প্রমাণগুলি প্রযুক্ত করা সকল সময়ে প্রয়োজন হয় না, কিন্তু হাতে থাকা চাই ।
No comments
THANKS.