কমলাকান্তের দপ্তর - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
কমলাকান্তের দপ্তর
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
এক : - "নূতন কথা যে বলে, সেই পাগল বলিয়া গণ্য হয় । গ্যালিলিও বলিলেন, পৃথিবী ঘুরিতেছে । ইতালীয় ভদ্র সমাজ , ধার্মিক সমাজ, বিদ্বান্ সমাজ শুনিয়া হাসিলেন ; শুনিয়া স্থির করিলেন, গ্যালিলিওর মতিভ্রম হইয়াছে ।"(-'স্ত্রীলোকের রূপ ' - প্রবন্ধ )
দুই : - "প্রসন্নের দুগ্ধ দধি আছে , সে দিবে, আমার উদর আছে , খাইব, তাহার সঙ্গে এই সম্বন্ধ, ইহাতে সে মূল্য চাহে কোন্ অধিকারে ,তাহা আমি বুঝিতে পারিলাম না । প্রসন্ন বলে, আমি অধিকার অনধিকার বুঝি না ; আমার গোরু, আমার দুধ ,আমি মূল্য লইব ।
সে বুঝে না যে ,গোরু কাহারও নহে ;গোরু গোরুর নিজের ; দুধ ,যে খায় তারই ।" (-'বড় বাজার '-প্রবন্ধ )
তিন : - "এই বিশ্বসংসার একটি বৃহৎ বাজার -সকলেই সেখানে আপনাপন দোকান সাজাইয়া বসিয়া আছে । সকলেরই উদ্দেশ্য মূল্যপ্রাপ্তি । সকলেই অনবরত ডাকিতেছে, " আমার দোকানে ভালো জিনিস - খরিদ্দার চলে আয় " - সকলেরই একমাত্র উদ্দেশ্য , খরিদ্দারের চোখে ধূলা দিয়া রদি মাল পাচার করিবে ।দোকানদার খরিদ্দারে কেবল যুদ্ধ ,কে কাকে ফাঁকি দিতে পারে । সস্তা খরিদের অবিরত চেষ্টাকে মনুষ্য-জীবন বলে । " (-'বড় বাজার '-প্রবন্ধ )
চার : - "এ সংসারের ক্ষীর, সর , দুগ্ধ , দধি ,মৎস্য মাংস , সকলই তোমারা খাইবে , আমরা কিছু পাইব না
কেন ? তোমারা মনুষ্য , আমরা বিড়াল , প্রভেদ কি ?
তোমাদের ক্ষুৎপিপাসা আছে - আমাদের কি নাই ?তোমারা খাও , আমাদের আপত্তি নাই ; কিন্তু আমারা খাইলেই তোমরা কোন্ শাস্ত্রানুসারে ঠেঙ্গা লাঠি লইয়া মারিতে আইস , তাহা আমি বহু অনুসন্ধানে পাইলাম না। তোমরা আমার কাছে কিছু উপদেশ গ্রহণ কর ।
বিজ্ঞ চতুষ্পদের কাছে শিক্ষালাভ ব্যতীত তোমাদের
জ্ঞানোন্নতির উপায়ান্তর দেখি না ।" (-'বিড়াল'- প্রবন্ধ )
পাঁচ : - "চোর দোষী বটে , কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শত গুণে দোষী । চোরের দণ্ড হয় ; চুরির মুল যে কৃপণ,
তাহার দণ্ড হয় না কেন ?" (- 'বিড়াল'-প্রবন্ধ )
ছয় : - "তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ
দরিদ্রের ক্ষুধা কেহ বুঝে না । যে খাইতে বলিলে বিরক্ত হয় , তাহার জন্য ভোজের আয়োজন কর - আর যে ক্ষুধার জ্বালায় বিনা আহ্বানেই তোমার অন্ন খাইয়া
ফেলে, চোর বলিয়া তাহার দণ্ড কর -ছি ! ছি ! " (-'বিড়াল'-প্রবন্ধ )
সাত : - " চোরের দণ্ড আছে , নির্দ্দয়তার কি দণ্ড নাই ?
দরিদ্রের আহার সংগ্রহের দণ্ড আছে , ধনীর কার্পণ্যের দণ্ড নাই কেন ? " (- 'বিড়াল'-প্রবন্ধ )
আট : - " পাঁচ শত দরিদ্রকে বঞ্চিত করিয়া এক জনে পাঁচ শত লোকের আহার্য্য সংগ্রহ করিবে কেন ?
যদি করিল , তবে সে খাইয়া তাহার যাহা বাহিয়া পড়ে ,
তাহা দরিদ্রকে দিবে না কেন ? যদি না দেয় ,তবে দরিদ্র অবশ্য তাহার নিকট হইতে চুরি করিবে ; কেন না , অনাহারে মরিয়া যাইবার জন্য এ পৃথিবীতে কেহ আইসে নাই ।" (-'বিড়াল'-প্রবন্ধ )
নয় :- "যে বিচারক চোরকে সাজা দিবেন , তিনি আগে তিন দিবস উপবাস করিবেন । তাহাতে যদি তাঁহার চুরি করিয়া খাইতে ইচ্ছা না করে, তবে তিনি স্বচ্ছন্দে চোরকে ফাঁসি দিবেন ।" (-'বিড়াল'-প্রবন্ধ )
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
এক : - "নূতন কথা যে বলে, সেই পাগল বলিয়া গণ্য হয় । গ্যালিলিও বলিলেন, পৃথিবী ঘুরিতেছে । ইতালীয় ভদ্র সমাজ , ধার্মিক সমাজ, বিদ্বান্ সমাজ শুনিয়া হাসিলেন ; শুনিয়া স্থির করিলেন, গ্যালিলিওর মতিভ্রম হইয়াছে ।"(-'স্ত্রীলোকের রূপ ' - প্রবন্ধ )
দুই : - "প্রসন্নের দুগ্ধ দধি আছে , সে দিবে, আমার উদর আছে , খাইব, তাহার সঙ্গে এই সম্বন্ধ, ইহাতে সে মূল্য চাহে কোন্ অধিকারে ,তাহা আমি বুঝিতে পারিলাম না । প্রসন্ন বলে, আমি অধিকার অনধিকার বুঝি না ; আমার গোরু, আমার দুধ ,আমি মূল্য লইব ।
সে বুঝে না যে ,গোরু কাহারও নহে ;গোরু গোরুর নিজের ; দুধ ,যে খায় তারই ।" (-'বড় বাজার '-প্রবন্ধ )
তিন : - "এই বিশ্বসংসার একটি বৃহৎ বাজার -সকলেই সেখানে আপনাপন দোকান সাজাইয়া বসিয়া আছে । সকলেরই উদ্দেশ্য মূল্যপ্রাপ্তি । সকলেই অনবরত ডাকিতেছে, " আমার দোকানে ভালো জিনিস - খরিদ্দার চলে আয় " - সকলেরই একমাত্র উদ্দেশ্য , খরিদ্দারের চোখে ধূলা দিয়া রদি মাল পাচার করিবে ।দোকানদার খরিদ্দারে কেবল যুদ্ধ ,কে কাকে ফাঁকি দিতে পারে । সস্তা খরিদের অবিরত চেষ্টাকে মনুষ্য-জীবন বলে । " (-'বড় বাজার '-প্রবন্ধ )
চার : - "এ সংসারের ক্ষীর, সর , দুগ্ধ , দধি ,মৎস্য মাংস , সকলই তোমারা খাইবে , আমরা কিছু পাইব না
কেন ? তোমারা মনুষ্য , আমরা বিড়াল , প্রভেদ কি ?
তোমাদের ক্ষুৎপিপাসা আছে - আমাদের কি নাই ?তোমারা খাও , আমাদের আপত্তি নাই ; কিন্তু আমারা খাইলেই তোমরা কোন্ শাস্ত্রানুসারে ঠেঙ্গা লাঠি লইয়া মারিতে আইস , তাহা আমি বহু অনুসন্ধানে পাইলাম না। তোমরা আমার কাছে কিছু উপদেশ গ্রহণ কর ।
বিজ্ঞ চতুষ্পদের কাছে শিক্ষালাভ ব্যতীত তোমাদের
জ্ঞানোন্নতির উপায়ান্তর দেখি না ।" (-'বিড়াল'- প্রবন্ধ )
পাঁচ : - "চোর দোষী বটে , কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শত গুণে দোষী । চোরের দণ্ড হয় ; চুরির মুল যে কৃপণ,
তাহার দণ্ড হয় না কেন ?" (- 'বিড়াল'-প্রবন্ধ )
ছয় : - "তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ
দরিদ্রের ক্ষুধা কেহ বুঝে না । যে খাইতে বলিলে বিরক্ত হয় , তাহার জন্য ভোজের আয়োজন কর - আর যে ক্ষুধার জ্বালায় বিনা আহ্বানেই তোমার অন্ন খাইয়া
ফেলে, চোর বলিয়া তাহার দণ্ড কর -ছি ! ছি ! " (-'বিড়াল'-প্রবন্ধ )
সাত : - " চোরের দণ্ড আছে , নির্দ্দয়তার কি দণ্ড নাই ?
দরিদ্রের আহার সংগ্রহের দণ্ড আছে , ধনীর কার্পণ্যের দণ্ড নাই কেন ? " (- 'বিড়াল'-প্রবন্ধ )
আট : - " পাঁচ শত দরিদ্রকে বঞ্চিত করিয়া এক জনে পাঁচ শত লোকের আহার্য্য সংগ্রহ করিবে কেন ?
যদি করিল , তবে সে খাইয়া তাহার যাহা বাহিয়া পড়ে ,
তাহা দরিদ্রকে দিবে না কেন ? যদি না দেয় ,তবে দরিদ্র অবশ্য তাহার নিকট হইতে চুরি করিবে ; কেন না , অনাহারে মরিয়া যাইবার জন্য এ পৃথিবীতে কেহ আইসে নাই ।" (-'বিড়াল'-প্রবন্ধ )
নয় :- "যে বিচারক চোরকে সাজা দিবেন , তিনি আগে তিন দিবস উপবাস করিবেন । তাহাতে যদি তাঁহার চুরি করিয়া খাইতে ইচ্ছা না করে, তবে তিনি স্বচ্ছন্দে চোরকে ফাঁসি দিবেন ।" (-'বিড়াল'-প্রবন্ধ )
No comments
THANKS.