বৈশাখ -----রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বৈশাখ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ ।
ধুলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল,
তপঃ ক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল
কারে দাও ডাক
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ ।
ছায়ামূর্তি যত অনুচর
দগ্ধতাম্র দিগন্তের কোন্ ছিদ্র হতে ছুটে আসে।
কী ভীষ্ম অদৃশ্য নৃত্যে মাতি উঠে মধ্যাহ্ন-আকাশে
নিঃশব্দ প্রখর
ছায়ামূর্তি তব অনুচর ।
মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ ।
রহি রহি দহি দহি উগ্রবেগে উঠিছে ঘুরিয়া,
আবর্তিয়া তৃণপর্ণ, ঘূর্ণচ্ছন্দে শূন্যে আলোড়িয়া
চূর্ণরেণুরাশ
মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ।
দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী ।
পদ্মাসনে বস আসি রক্তনেত্র তুলিয়া ললাটে,
শুষ্কজল নদীতীরে শস্যশূণ্য তৃষাদীর্ণ মাঠে
উদাসী প্রবাসী,
দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী ।
জ্বলিতেছে সম্মুখে তোমার
লোলুপ চিতাগ্নিশিখা, লেহি লেহি বিরাট অম্বর
নিখিলের পরিত্যক্ত মৃতস্তূপ বিগত বৎসর
করি ভষ্মসার
চিতা জ্বলে সম্মুখে তোমার ।
হে বৈরাগী, করো শান্তিপাঠ ।
উদার উদাস কন্ঠ যাক ছুটে দক্ষিণে ও বামে ,
যাক নদী পার হয়ে ,যাক চলি গ্রাম হতে গ্রামে,
পূর্ণ করি মাঠ ।
হে বৈরাগী , করো শান্তিপাঠ ।
সকরুণ তব মন্ত্রসাথে
মর্মভেদী যত দুঃখ বিস্তারিয়া যাক বিশ্ব-'পরে ,
ক্লান্ত কপোতের কন্ঠে , ক্ষীণ জাহ্নবীর শ্রান্তস্বরে ,
অশ্বত্থছায়াতে
সকরুণ তব মন্ত্রসাথে ।
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ
তোমার ফুৎকার-ক্ষুব্ধ ধুলাসম উড়ুক গগনে,
ভ'রে দিক নিকুঞ্জের স্খলিত ফুলের গন্ধসনে
আকুল আকাশ ।
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ ।
তোমার গেরুয়া বস্ত্রাঞ্চল
দাও পাতি নভস্তলে, বিশাল বৈরাগ্যে আবরিয়া
জরা মৃত্যু ক্ষুধা তৃষ্ণা , লক্ষকোটি নরনারী-হিয়া
চিন্তায় বিকল ।
দাও পাতি গেরুয়া অঞ্চল ।
ছাড়ো ডাক, হে রুদ্র বৈশাখ ।
ভাঙিয়া মধ্যাহ্নতন্দ্রা জাগি উঠি বাহিরিব দ্বারে,
চেয়ে রব প্রাণীশূণ্য দগ্ধতৃণ দিগন্তের পারে
নিস্তব্ধ নির্বাক ।
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ ।
(----------"কল্পনা" )
১৩০৬
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ ।
ধুলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল,
তপঃ ক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল
কারে দাও ডাক
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ ।
ছায়ামূর্তি যত অনুচর
দগ্ধতাম্র দিগন্তের কোন্ ছিদ্র হতে ছুটে আসে।
কী ভীষ্ম অদৃশ্য নৃত্যে মাতি উঠে মধ্যাহ্ন-আকাশে
নিঃশব্দ প্রখর
ছায়ামূর্তি তব অনুচর ।
মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ ।
রহি রহি দহি দহি উগ্রবেগে উঠিছে ঘুরিয়া,
আবর্তিয়া তৃণপর্ণ, ঘূর্ণচ্ছন্দে শূন্যে আলোড়িয়া
চূর্ণরেণুরাশ
মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ।
দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী ।
পদ্মাসনে বস আসি রক্তনেত্র তুলিয়া ললাটে,
শুষ্কজল নদীতীরে শস্যশূণ্য তৃষাদীর্ণ মাঠে
উদাসী প্রবাসী,
দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী ।
জ্বলিতেছে সম্মুখে তোমার
লোলুপ চিতাগ্নিশিখা, লেহি লেহি বিরাট অম্বর
নিখিলের পরিত্যক্ত মৃতস্তূপ বিগত বৎসর
করি ভষ্মসার
চিতা জ্বলে সম্মুখে তোমার ।
হে বৈরাগী, করো শান্তিপাঠ ।
উদার উদাস কন্ঠ যাক ছুটে দক্ষিণে ও বামে ,
যাক নদী পার হয়ে ,যাক চলি গ্রাম হতে গ্রামে,
পূর্ণ করি মাঠ ।
হে বৈরাগী , করো শান্তিপাঠ ।
সকরুণ তব মন্ত্রসাথে
মর্মভেদী যত দুঃখ বিস্তারিয়া যাক বিশ্ব-'পরে ,
ক্লান্ত কপোতের কন্ঠে , ক্ষীণ জাহ্নবীর শ্রান্তস্বরে ,
অশ্বত্থছায়াতে
সকরুণ তব মন্ত্রসাথে ।
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ
তোমার ফুৎকার-ক্ষুব্ধ ধুলাসম উড়ুক গগনে,
ভ'রে দিক নিকুঞ্জের স্খলিত ফুলের গন্ধসনে
আকুল আকাশ ।
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ ।
তোমার গেরুয়া বস্ত্রাঞ্চল
দাও পাতি নভস্তলে, বিশাল বৈরাগ্যে আবরিয়া
জরা মৃত্যু ক্ষুধা তৃষ্ণা , লক্ষকোটি নরনারী-হিয়া
চিন্তায় বিকল ।
দাও পাতি গেরুয়া অঞ্চল ।
ছাড়ো ডাক, হে রুদ্র বৈশাখ ।
ভাঙিয়া মধ্যাহ্নতন্দ্রা জাগি উঠি বাহিরিব দ্বারে,
চেয়ে রব প্রাণীশূণ্য দগ্ধতৃণ দিগন্তের পারে
নিস্তব্ধ নির্বাক ।
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ ।
(----------"কল্পনা" )
১৩০৬
No comments
THANKS.