সমাস , সমস্যমান পদ, পূর্বপদ , পরপদ, ব্যাসবাক্য, সন্ধি ও সমাস এর পার্থক্য , সমাসের শ্রেণীবিভাগ


সমাস


'সমাস'  শব্দের  অর্থ      'সংক্ষেপ '।

'সমাস'   শব্দটিকে   বিশ্লেষণ করলে ---সম-অস্+ঘঙ্ ।

দুই বা  ততোধিক  অর্থ যুক্ত পদকে একপদে পরিণত করার নাম হল    'সমাস '।                                    
   
                       
বৃক্ষের  ছায়া =বৃক্ষছায়া ।
বিস্ময়   কে  আপন্ন = বিস্ময়াপন্ন।

এখানে   'বৃক্ষের   ছায়া ' না  বলিয়া  'বৃক্ষ ছায়া'   বললে  শুনতে সুন্দর লাগে  ও  সংক্ষেপে  বলা হয়।

'বিস্ময়  কে   আপন্ন' না  বলিয়া   'বিস্ময়াপন্ন ' বললে শুনতে  সুন্দর   লাগে  ও  সংক্ষেপে   বলা   হয় । 

সংক্ষেপে   সুন্দর   করে    বলার জন্য   দুই  বা  ততোধিক   অর্থ যুক্ত পদকে একপদে  পরিণত   করার   নাম   হল   'সমাস '।                                                     
'সমাস '  সম্পর্কে  আলোচনা  করতে   গেলে  কতকগুলি   বিষয়   সম্পর্কে   বিশেষভাবে সচেতন  থাকতে   হবে  ।                                                   

যথা:-সমাসবদ্ধ পদ :-দুই  বা  ততোধিক পদের   একপদে   গঠিত নূতন    পদকে   'সমাসবদ্ধ  পদ ' বলে বা    'সমস্ত পদ '   বলে ।
যেমন :-রথদেখা, বীণাপাণি,নীলাকাশ,দুধভাত,ইত্যাদি ।

সমস্যমান পদ:-যে সমস্ত পদের সমন্বয়ে সমস্তপদেরসৃষ্টি
তাদের  প্রত্যেকটিকে  'সমস্যমান পদ 'বলে ।

যেমন :-''বৃক্ষছায়া "  সমস্ত পদ,  "বৃক্ষের"  ও  "ছায়া"
সমস্যমান  পদ ।                                                   

পূর্ব পদ:-সমস্যমান  পদ গুলির  মধ্যে  যে  পদটি  প্রথমে  থাকে  , তাকে   'পূর্বপদ' বলে ।

যেমন :-"বৃক্ষের "  পদটি  "পূর্ব পদের" পরিচয়।

পরপদ  বা  উত্তরপদ :- সমস্যমান পদ গুলির মধ্যে যে পদটি প্রথমে থাকে তার পরে যে পদ থাকে তাকে পরপদ বলে ।                                                  

যেমন :- "ছায়া " পদটি  এখানে "পরপদ   বা   উত্তরপদ" বলে ।           

ব্যাসবাক্য :-   সমস্ত-পদের  বিশ্লেষণ করে  সমাসের
অর্থটি যে  বাক্য বা বাক্যাংশের দ্বারা  ব্যাখ্যা করে দেখানো  হয়েছে তাকে  ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বা  সমাসবাক্য বলে ।                   
                           

'সমাস ' শব্দের  অর্থ  হচ্ছে  সংক্ষেপ, আর  'ব্যাস'  
শব্দের অর্থ হচ্ছে বিস্তার ।                                    

 ব্যাসবাক্যেসমস্যমান পদ গুলি বিচ্ছিন্নভাবে থাকে ,বলিয়া    'বিস্তার 'করে   থাকে ,                                 আর সমাসে অবিচ্ছিন্নভাবে সংযুক্ত থাকে বলিয়া 'সংক্ষেপ'।                                              
                  
ব্যাসবাক্যেসমস্যমান পদ গুলির  পূর্বপদের  বিভক্তি লোপ  বা বিভক্তি স্থানীয়   অনুসর্গের লোপ সমাসের প্রধান লক্ষণ ।                                                       

বিভক্তিলোপের পর সন্ধি সূত্রের নিয়ম অনুসারে    পূর্বপদের শেষ বর্ণের সাথে পরপদের প্রথম বর্ণের 
সন্ধি  হবে ।                                                  

যেমন :-  'শীত'   ও  ' উষ্ণ ' =    'শীতোষ্ণ' ।
এখানে  প্রথম পদের  'শীত্' শব্দের +  অ ,এবং  
পরপদের   'উষ্ণ 'শব্দের  'উ'-কার  উভয়ের  মিলনে         'ও ' পূর্বপদে  যুক্ত  হয়েছে ' শীতোষ্ণ ' সমাস ।

সন্ধি  ও  সমাস  - কিন্তু  এক নয় , এদের মধ্যে  যেমন 
মিল খুঁজে পাওয়া যাবে, তেমনি  অমিলও  খুঁজে পাওয়া যাবে ।                                                                        
যেমন :-      প্রথম  মিল  হল বাক্য  মধ্যে  পদের  সংক্ষেপ-করণ ও সৌন্দর্য  বৃদ্ধি-করণ ।

উভয়ের  উদ্দেশ্য  একই  হলেও  অমিল  প্রচুর ।

( ১ )   সন্ধি তে  বর্ণের  সাথে  বর্ণের মিলন হয় ।
সমাসে  পদের   সাথে  পদের  মিলন  হয়  ।

( ২ ) সন্ধি তে  অর্থ  সম্পর্ক বড়ো নয় ,মিলনটাই বড়ো ।
সমাসে  অর্থ   সম্পর্কই  বড়ো  ।

( ৩ )  সন্ধি তে   পদগুলির অর্থ   অপরিবর্তিত থাকে ।
সমাসে   দ্বন্দ্ব  সমাস ব্যতীত  অন্যান্য সমাসে কখনও 
পরপদের , পূর্বপদের  বা অন্যপদের অর্থ প্রাধান্য পায় ।

( ৪ )   সন্ধি তে পূর্বপদের বিভক্তি লুপ্ত হয় না ।
সমাসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্বপদের বিভক্তিচিহ্ন লুপ্ত 
হয়।                                            

( ৫ )   সন্ধি তে পদগুলির ক্রম অক্ষুণ্ণ  থাকে ।
 সমাসে  কখনো কখনো ক্রম স্থান-পরিবর্তন করে ।
 যেমন :-রাত্রির  পূর্ব = পূর্বরাত্র  ( সমাস ) ।



সমাসের  শ্রেণীবিভাগ 

সংস্কৃত ভাষায় সমাস  সাধারণত  চারপ্রকার ।
দ্বন্দ্ব  , অব্যয়ীভাব  , তৎপুরুষ  ও বহুব্রীহি ।

কিন্তু আমার বাংলা -সমাসকে ছয়টি ভাগে ভাগ করে থাকি ।   দ্বন্দ্ব  , অব্যয়ীভাব  , তৎপুরুষ  ,  বহুব্রীহি, কর্মধারয়  ও  দ্বিগু ।

পরবর্তী  অধ্যায়ে সমাসের ছয়টি ভাগ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব ।

No comments

THANKS.

মাসি পিসি -----------------------------------জয় গোস্বামী

 মাসি পিসি  জয়   গোস্বামী  ফুল  ছুঁয়ে  যায় চোখের  পাতায়,  জল ছুঁয়ে যায় ঠোঁটে ঘুমপাড়ানি  মাসিপিসি  রাত  থাকতে ওঠে  শুকতারাটি...

Theme images by luoman. Powered by Blogger.